Nilanjan Guha Majumder
তেপান্তরের মাঠ
সেই ছোটো থেকেই বংশী দেখে আসছে, চাঁদটা একদম গোল থালার মত, তেপান্তরের মাঠের ওই দূর কোণ থেকেউঁকি মারে, তারপর আস্তে আস্তে মাঝ আকাশে উঠে আসে, কানু খুড়োর খামারের ওই লম্বা লম্বা তালগাছগুলোর মাথার উপর দিয়ে।
মাটির ঘরের খোলা জানলা দিয়ে, চালের খড়ের পেছনে, ওই গোল চাঁদটার লুকিয়ে পড়া দেখতে দেখতেই বংশীর ঘুমএসে যেতো।
আরেকটু বড় হবার পর, বংশী তার বাবাকে জিগ্যেস করেছিলো - "আচ্ছা বাবা, চাঁদটা ওই মাঠের পিছনে কোথায় থাকে?"।
আধজ্বলন্ত বিড়িতে শুকনো টান দিতে দিতে বংশীর বাবা বলেছিলো - "শহরে গিয়ে ইস্কুলের মাস্টারকে জিগ্যেস করবি!"।
তা করেছিলো বংশী, আরো কয়েক বছর পর। বারাসাতের ব্যবসায়ী, এগারো কাঠা জমির উপর বিশাল বাংলোর মালিক, নিঃসন্তান সুশোভন দস্তিদারের বাড়িতে সন্তানের স্নেহেই থাকতো সে, ফাইফরমাশ কাজও করতো বাড়ির মধ্যেই। ইংরাজি মিডিয়াম স্কুলে টাই ঝুলিয়ে পড়তেও যেতো।
যেদিন প্রশ্নটা স্কুলের গম্ভীর অনিল স্যারকে করেছিলো, ক্লাসশুদ্ধু ছেলেমেয়ের হাসি ছাপিয়ে স্যারের গম্ভীর গলা ভেসে এসেছিলো - "এই মর্কটের মত প্রশ্ন দ্বিতীয়বার করলে, আমি নিজে সুশোভন বাবুর সঙ্গে কথা বলবো!"।
সুবিশাল বারান্দা ভেসে যাচ্ছে স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয়। আজ পূর্ণিমা। বংশীর স্ত্রী লক্ষীপুজোর আয়োজনে ব্যস্ত।বিশাল বাড়িটাতে লোকজন অল্পই। সুশোভন দস্তিদার গত হয়েছেন বংশীর হাতে ব্যবসার দায়ীত্ব সঁপে দিয়ে। ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে আরো অনেক বেশী।
বারান্দার এক অন্ধকার কোণায় বসে ঝিঁঝির ডাক শুনছিলেন বংশী দস্তিদার। বারান্দার উল্টোদিকের ঘরে হালকা আলোয় দেখা যায় অহীনের ছোট্ট চেহারা, মোবাইল স্ক্রীণের উপর ঝুঁকে পড়া, মুখের উপর উজ্জ্বল আলোয় মোটা কাচের চশমা জ্বলজ্বল করছে।
অহীন বংশী দস্তিদারের একমাত্র সন্তান। সে তালগাছ দেখেছে, চাঁদও দেখেছে, তবে তার কোনো প্রশ্ন নেই।
বংশী বাবু চান না কেউ তার ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসুক।
